জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : চারদিকে আওয়ামীলীগের জয় জয়কার। বর্তমানে সারাদেশে দলটি যেকোন সময়ের তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় রাঙ্গুনিয়াতেও বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই আওয়ামীলীগের কর্মসূচি। প্রতিটি সভা সেমিনারে প্রচুর দলীয় নেতাকর্মীরা ভীড় জমায়। ছবি তুলে, সেলফি তুলে। আর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে লাইক আর কমেন্ট কামিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রমাণ রাখে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কে কতটুক সক্রিয় তা খতিয়ে দেখলে ১’শ নাম্বারে ১০ পাবে কিনাও সন্দেহ পোষন করছেন অনেকেই। বর্তমানে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার ৭ বছর পার করছে। এই ৭ বছরের ক্ষমতায় রাঙ্গুনিয়ায় ভুঁইফোড় সংগঠন ও নেতাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ফেসবুকে একশ্রেণির মানুষ যেভাবে লম্বা লম্বা বুলি ঝাড়ছে, ছবি দিচ্ছে, তাক্তবিরক্ত জনসাধারণ ব্যাপারটিকে ‘অতি আওয়ামীলীগার সাজার প্রতিযোগীতা’ বলে মনে করছেন। যারা জীবনে কখনও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এমনকি তাদের চৌদ্দগোষ্ঠির কেউ কখনো বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি বা দলটির সমর্থকও ছিলো না, তাদেরই এখন বুক চিতিয়ে নিজেদের আওয়ামী লীগার বলে জাহির করতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। হাইব্রিডদের চোটপাট ও আস্ফালন দেখে দীর্ঘদিনের ত্যাগী-পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতারা হতাশার সুরে বলছেন, ‘এতো আওয়ামীলীগার রাখব কোথায়!’ উপজেলায় আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন এই ধরনের কয়েকজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে কথা হয়। তারা বলছেন ১৯৭৫ এর আগেও এ ধরনের আওয়ামীলীগারের উৎপাত বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগষ্টের পর লন্ঠন হাতে পইপই করে খুঁজেও ওই অতি উৎসাহী আওয়ামীলীগারদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তখন ত্যাগী নেতারাই দলের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে ফের হাইব্রিড আওয়ামীলীগারদের উপদ্রব শুরু হয়। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরও দলের চরম দুর্দিনে সেই হাইব্রিড-ভুঁইফোড়রা হাওয়া। মামলা-হামলা, জেল- জুলুম সবকিছুই মোকাবিলা করেছেন খাঁটি ও ত্যাগীরাই। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর ভুঁইফোড়দের আত্বপ্রকাশের হিড়িক লেগে যায়। নিত্যনতুন নামে আত্বপ্রকাশ হতে থাকে নতুন নতুন সংগঠন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও নবাগত হাইব্রিডদের দেখা যাচ্ছে। হাইব্রিড নেতাদের দাপট আছে, কিন্তু মাঠে নেই। ফলে ত্যাগী নেতারা অনন্তকাল ধরে মাঠে থাকলেও নেই স্বস্তিতে। উপজেলার আশির দশকের কয়েকজন আওয়ামী রাজনীতিবীদের কথা বলে জানা গেছে, ‘তৃণমূল আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যাঁরা নিবেদিত প্রাণ বলে পরিচিত ছিলেন, দলের দুর্দিনে যাঁরা ত্যাগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন, আজ তারাই নিপতিত হচ্ছেন। ক্ষমতাবান, সুবিধাভোগী আর স্বার্থবাজ নেতারা তাঁদের দূরে ঠেলে রেখেছে। আর ভুঁইফোড় সুবিধাভোগীরা বিপুল দাপটে অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতায় তারা পরিপুষ্ট। আর ত্যাগীরা বঞ্চিত আর নিপিড়িত। অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সুযোগ সন্ধানীদের তৎপরতার কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে তৃণমূল আওয়ামীলীগ। উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের মধ্যে দলীয় আদর্শের ছিটেফোটাও নেই। ছলে-বলে-কৌশলে কখনও মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে, চাটুকারিতা করে তাঁরা দলীয় পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে উৎকণ্ঠা খাঁটি আওয়ামী লীগারদের। তাদের অনেকে এখন আশংকা করছেন ভবিষ্যতে কখনও দলীয় দুর্দিন এলে এসব বর্ণচোরা নেতারা আবারও সাপের ন্যায় চামড়া বদলে নিবে। আর পূর্বের ন্যায় নানা বঞ্চনা ও গঞ্জনার শিকার হবেন ত্যাগীরাই। তাই দলীয় খাঁটি আওয়ামীলীগাদের এখনই যদি উপযুক্ত সম্মানে অসিন করা না হয়, তবে দলীয় দুর্দিনে দলটি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে বলে বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।